⇒পিটুইটারি গ্রন্থি:
পিটুইটারি গ্রন্থি কর্তক নিঃসৃত হরমোনের সংখ্যা অনেক। এসব হরমোন অন্যান্য হরমোন নিঃস্রাবী গ্রন্থির কাজ নিয়ন্ত্রণ করে; এজন্য এই গ্রন্থিকে প্রচলিতভাবে রাজগ্রন্থি/গ্রন্থিরাজ/প্রভুগ্রন্থি (Master Gland), হাইপোফাইসিস সেরেব্রি বলে। তবে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস পিটুইটারি গ্রন্থির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে বলে আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যায় মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসকে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতন্ত্র নিয়ন্ত্রক বা The Band master of the Endocrine Orchestra বলা হয়।
বর্ণনাঃ মানবদেহে এর মোট ওজন ৫০০ মি. গ্রাম। স্ত্রীলোকের পিটুইটারি পুরুষের পিটুইটারি অপেক্ষা ভারী। এটা তিন খ-ে বিভক্ত। যথা- (ক) অগ্রভাব বা অগ্রখন্ড -, (খ) মধ্যভাগ বা মধ্যখন্ড – এবং (গ) পশ্চাৎ ভাগ বা পশ্চাৎ খণ্ড
⇒ থাইরয়েড ((Thyroid gland):
শ্বাসনালীর উভয় পার্শ্বে হরিদ্রাভ লাল বর্ণের যে দুটি পি- অবস্থিত থাকে, তাকে থাইরয়েড গ্রন্থি বলে।
বর্ণনা: এর ওজন প্রায় ২০ – ২৫ গ্রাম। এটা পুরুষ অপেক্ষা স্ত্রীলোকে অধিক স্পষ্ট। এটা ঘনতলীয় আবরণী কলা কোষ দ্বারা পরিবেষ্টিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রায় গোলাকার থলি বা ভেসিকল দ্বারা গঠিত।নিসৃঃত হরমোন: থাইরয়েড হতে- (র) থাইরোক্সিন, (রর) ক্যালসিটোনিন্ ও (ররর) ট্রাই-আয়োডো-থাইরোনিন্ হরমোন নিঃসৃত হয়।
⇒প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি Parathyroid gland:
থাইরয়েড গ্রন্থির পৃষ্ঠদেশে অতি ক্ষুদ্র ডিম্বাকৃতি যে দুটি জোড়া অন্তঃক্ষরাগ্রন্থি অঙ্গাঙ্গিভাবে প্রোথিত থাকে তাদেরকে প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি বলে।
বর্ণনা: প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থিগুলোর একত্রে ওজন ১৪০ মি. গ্রাম। প্রধান কোন ও অক্সিফিল কোষ, এই দুই প্রকার কোষের সমাবেশ প্রতিটি প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থিতে পরিলক্ষিত হয়।
⇒হরমোনের বৈশিষ্ট্য:
১।নালীবিহীন গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়।
২।রক্ত বা লসিকার মাধ্যমে পরিবাহিত হয়।
৩।উৎপত্তিস্থল থেকে দূরবর্তী কোনো নির্দিষ্ট অংশে বা অঙ্গে কাজ করে।
৪।কার্যপদ্ধতি মন্থর অথচ ফল সুদূরপ্রসারী।
৫।কাজ শেষে বিনষ্ট হয় এবং দ্রুত নিঃষ্ক্রান্ত হয়।
৬।এদের রাসায়নিক প্রকৃতি স্টেরয়েড, প্রোটিন বা ফেনলধর্মী।
৭।দেহে রাসায়নিক সমন্বয়ক (পযবসরপধষ পড়-ড়ৎফরহধঃড়ৎ) হিসেবে কাজ করে।
৮।নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে কম বা বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হলে দেহে অস্বাভাবিকত্ব প্রকাশ পায়।
⇒অস্বাভাবিক গ্রোথ হরমোন ক্ষরণের ফলাফল:
অস্বাভাবিক গ্রোথ হরমোন ক্ষরণের কারণে মানবদেহে তিনটি সমস্যার সৃষ্টি হয়। যেমন-
ক)বামনত্ত্ব (dwarfism): শিশুকালে পরিমিত পরিমাণ গ্রোথ হরমোন ক্ষরণ না হলে মানুষ বামন হয়;
খ)দৈত্যত্ত্ব (gigantism): শিশুকালে অস্থি গঠনের পূর্বে অতিরিক্ত পরিমাণ গ্রোথ হরমোন ক্ষরিত হলে মানুষ দৈত্যাকৃতির হয়; এবং
গ)গরিলাত্ত্ব (acromegaly): বয়স্ক অবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণ গ্রোথ হরমোন ক্ষরিত হলে মানুষের হাত ও মুখমন্ডলের অস্থি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে গরিলার মতো রূপ ধারণ করে।
বৃক্ক থেকে ক্ষরিত এরিথ্রোপোয়েটিন লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে।
অ্যাড্রেনোকর্টিকোট্রফিক হরমোন (অঈঞঐ) মেলানিন রঞ্জকসংশ্লেষ নিয়ন্ত্রণ করে গায়ের রং নিয়ন্ত্রণ করে।
⇒হরমোনের প্রভাব:
- মানুষের বৃদ্ধি হরমোন সাধারণভাবে সোমাটোট্রপিন নামে পরিচিত।
- এটি এক ধরনের পেপটাইড হরমোন যা প্রায় ২০০টি অ্যামিনো এসিডে গঠিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৩০ বছর বয়সের পরে বৃদ্ধি হরমোনের ক্ষরণ কমে যায়।
মানবদেহে বৃদ্ধি হরমোনের নেতিবাচক ক্রিয়া:
- অ্যাক্রোমেগালি/মারিজ ব্যাধি: পূর্ণবয়ষ্ক মানবদেহে অতিরিক্ত বৃদ্ধি হরমোন ক্ষরণের ফলে মুখমন্ডল, মাথা, হাত, পা, বুকের, অস্বাভাবিক স্ফীতি।
- টারনার সিনড্রোম: নারীদেহে ক্রোমোজোম সংক্রান্ত ব্যাধি যখন দুটি X-ক্রোমোজোমের একটি কিংবা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।
- প্রাডের-উইলি সিনড্রোম: মানবদেহে ক্রোমোজোম ১৫-এ ক্রোমোজোমীয় পদার্থের অনুপস্থিতির ফলে সৃষ্ট ব্যাধি। এ রোগের লক্ষণ হচ্ছে বিলম্বিত বৃদ্ধি, দুর্বল পেশি গঠন, খর্ব আকৃতি, ছোট হাত ও পা, অসম্পূর্ণ যৌন পরিস্ফুটন; বিশেষ ধরনের মুখমন্ডল, সারাক্ষণ ক্ষধুাভাব ইত্যাদি।
- হাইপোগ্লাইসিমিয়া: রক্তে অস্বাভাবিক কম মাত্রায় গ্লুকোজের উপস্থিতি।
- কার্পাল টানেল সিনড্রোম: হাতের তালুতে সরবরাহকারী মিডিয়ান ¯œায়ু কব্জির গোড়ায় চাপা পড়লে আঙ্গুল ও হাতে, এমনটি কনুই পর্যন্ত অসাড় ও কাঁটা কাঁটা ভাব।
হরমোনের প্রভাবে নারীদেহে আচরণগত পরিবর্তন:
- রজঃচক্রকালীন আচরণগত পরিবর্তন: রজঃচক্রের সময় কিছু হরমোনের (যেমন-ফলিকল উদ্দীপক হরমোন, লুটিনাইজিং হরমোন, এস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরণ) ক্ষরণে তারতম্য ঘটে।
- গর্ভকালীন আচরণগত পরিবর্তন: গর্ভকালীন সময়ে এস্ট্রাডিওল নামে এক ধরনের এস্ট্রোজেন জাতীয় হরমোন বিপুল পরিমাণে উৎপন্ন হয়। এ সময়কার অন্যান্য হরমোনের মধ্যে রয়েছে প্রোজেস্টেরণ, হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন (Human chorionic gonadotropin, HCG), রিলাক্সিন প্রভৃতি।
- খেলাধূলাকালীন আচরণগত পরিবর্তন: গবেষণার দেখা গেছে, নারী খেলোয়াড়রা যখন প্রতিদ্বন্ধিতায় ব্যস্ত থাকে তখন তাদের শরীরে টেস্টোস্টেরণ হরমোন ক্ষরণ অখেলোয়াড় নারীদের চেয়ে অনেক বেশি হয়। শক্তি যোগাতে, সাহসী ও দৃঢ়চেতা করতে এ হরমোন যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
হরমোনের প্রভাবে পুরুষদেহে আচরণগত পরিবর্তন:
- নারীতে যেমন রজঃনিবৃত্তি হয়, তেমনি পুরুষেও হয় শুক্রনিবৃত্তি। এর নাম অ্যান্ড্রোপজ। এ সময় ৪০ বছর বয়স থেকে টেস্টোস্টেরণ ক্ষরণ ক্রমশ কমে আসে।
অনিয়ন্ত্রিত হরমোন ব্যবহারের ফলাফল:
- এপিনেফ্রিন (অ্যাড্রেনালিন): ফুসফুসের ভেতরে বাতাস চলাচলের নালি খুলতে, রক্তবাহিকা সংকীর্ণ করতে এবং বিভিন্ন মারাত্মক অ্যালার্জিক ক্রিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করতে সংশ্লেষিত এপিনেফ্রিন ব্যবহৃত হয়।
Leave a Reply