দিমিত্রি ইভানোভিচ মেন্ডেলিফ (১৮৩৪ – ১৯০৭) ১৮৬৯ সালে সর্বপ্রথম পর্যায়সূত্র উপস্থাপন করেন এবং মৌলসমূহকে ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের ভিত্তিতে সজ্জিত করে পর্যায় সারণি প্রণয়ন করেন।তার এ যুগান্তকারী আবিষ্কারের ফলে মৌলসমূহের রসায়ন পাঠ অনেক সহজ হয়।
ল্যাভয়সিয়ে সর্বপ্রথম ১৭৮৯ সালে ভৌত অবস্থার উপর ভিত্তি করে মৌলসমূহকে তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করেন।
১৮৬৪ সালে ইংরেজ বিজ্ঞানী জন নিউল্যান্ড মৌলসমূহকে তাদের ভর অনুযায়ী সাজিয়ে প্রতি অষ্টম মৌলসমূহে ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মে মিল দেখতে পান।
১৮৬৯ সালে রুশ বিজ্ঞানী ম্যান্ডেলিফ এবং জার্মান বিজ্ঞানী লুথার মেয়র পারমাণবিক ভরের উপর ভিত্তি করে মৌলসমূহের একটি তালিকা প্রকাশ করেন যা রসায়নে পর্যায় সারণি নামে ।
⇒ ২০১২ সাল পর্যন্ত ১১৮টি মৌল শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে IUPAC ১১৪ টিকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
⇒১১৪ টি মৌলের মধ্যে ১১২ টির নামকরণ করা হয়েছে, ৯৮ টি মৌল প্রকৃতিতে পাওয়া যায়, বাকিগুলো পরীক্ষাগারে তৈরি করা সম্ভব।
⇒প্রকৃতিতে প্রাপ্ত ৯৮ টি মৌলের মধ্যে ৮৪ টি মৌলকে প্রাথমিক মৌল বলা হয় এবং বাকি ১৪ টি মৌল তেজস্ক্রিয়তার মাধ্যমে উৎপন্ন হয়।
⇒ ল্যাভয়সিয়ে ৩৩ টি মৌলের ছক তৈরি করেছিলেন আর ম্যান্ডেলিফ ৬৭ টি মৌল নিয়ে পর্যায় সারণি প্রবর্তন করেন।
পর্যায় সারণির মৌলসমূহের বেশির ভাগই অষ্টাদশ শতাব্দীতে আবিষ্কৃত হয়েছিল।
জেনে রাখঃ
- পর্যায় সারণি হলো মৌলসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম সন্নিবেশনের একটি ছক।
- পর্যায় সারণিতে ৭টি পর্যায় বা আনুভূমিক সারি ও ১৮ টি গ্রুপ বা খাড়া স্তম্ভ রয়েছে।
- পর্যায় -১ এ ২ টি মৌল, পর্যায় -২ ও পর্যায় -৩ এ ৮ টি করে মৌল, পর্যায় -৪ ও পর্যায় -৫ এ ১৮ টি করে মৌল, পর্যায়-৬ ও পর্যায় -৭ এ ৩২ টি করে মৌল সন্নিবেশিত হয়েছে।
- পর্যায়-৪ থেকে পর্যায় ৭ পর্যন্ত সবগুলো পর্যায়ের প্রতিটি গ্রুপই মৌল দ্বারা পূর্ণ।
পর্যায় -৬ ও পর্যায় -৭ এর গ্রুপ -৩ তে ১৫ টি মৌলের অবস্থান। বাকি ১৭ টি গ্রুপে একটি করে মৌল অবস্থান করে।
- একই পর্যায়ের বামদিক থেকে ডানদিকে মৌলসমূহের ধর্ম পরিবর্তিত হয়।
- একই গ্রুপের সকল মৌলের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম প্রায় একই রকম
জেনে রাখঃ
প্রথমদিকে আবিষ্কৃত মৌলসমূহকে বিজ্ঞানীরা ধাতু ও অধাতু এই দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করেন।
- ধাতুসমূহের মধ্যে সোনা ও রুপা কম সক্রিয় ধাতু যাদেরকে অভিজাত ধাতু বলে। আর লোহা ও দস্তা অধিক সক্রিয় ধাতু, যাদেরকে নিকৃষ্ট ধাতু বলে।
- ১৮২৯ সালে জার্মান বিজ্ঞানী জে. ডব্লিউ. ডোবেরাইনার পারমাণবিক ভরের সাথে মৌলসমূহকে সম্পর্কিত করে ত্রয়ী সূত্র প্রদান করেন।
- পর্যায় সারণির দুটি মৌলের পারমাণবিক ভরের গড় অন্য একটি মৌলের পারমাণবিক ভরের প্রায় সমান এবং মৌল তিনটির ধর্ম একইরকম। এই মৌল তিনটিকে ডোবেরাইনার ত্রয়ী বলে।
- ১৮৬৪ সালে ইংরেজ বিজ্ঞানী জন নিউল্যান্ড প্রস্তাব করেন যে মৌলগুলোকে তাদের পারমাণবিক ভর অনুযায়ী সাজালে প্রতি অষ্টম মৌলসমূহের ধর্মের মিল দেখা যায় যা ‘অষ্টক তত্ত্ব’ নামে পরিচিত।
- ম্যান্ডেলিফের পর্যায় সূত্র হলো, “যদি মৌলসমূহকে পারমাণবিক ভর অনুসারে সাজানো হয়, তবে তাদের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলি পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়।” ম্যান্ডেলিফের সংশোধিত পর্যায় সূত্রে পারমাণবিক ভরের স্থলে পারমাণবিক সংখ্যা হয়।
-
- ১৮৬৯ সালে বিজ্ঞানী ম্যান্ডেলিফ মৌলসমূহকে এর পারমাণবিক ভর অনুযায়ী সাজিয়ে আধুনিক পর্যায় সারণি প্রবর্তন করেছিলেন।
- পারমাণবিক ভর অনুযায়ী মৌলসমূহকে সাজালে আর্গন ও পটাসিয়ামের অবস্থান নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়।
- ১৯১৩ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী হেনরি মোসলে পারমাণবিক সংখ্যার ধারণা দেন। ম্যান্ডেলিফ আধুনিক পর্যায় সারণিতে পারমাণবিক সংখ্যার ধারণা ব্যবহার করে এর সংশোধিত রূপ প্রকাশ করেন।
- কোনো মৌলের প্রোটন সংখ্যাকে পারমাণবিক সংখ্যা বলে। একটি মৌলে যদি যতটি ইলেকট্রন থাকে ঠিক ততটি প্রোটন থাকে, তাহলে ইলেকট্রন সংখ্যাকে তার পারমাণবিক সংখ্যা বলে।
- ইলেকট্রন সংখ্যা পরিবর্তনে পরমাণুর পরিবর্তন হয় না কিন্তু প্রোটন সংখ্যা পরিবর্তনে পরমাণুর পরিবর্তন হয়।
পর্যায় সারণির মূল ভিত্তি ইলেকট্রন বিন্যাস। কারণ কোনো মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসই মূলত তার রাসায়নিক ধর্মাবলি নির্দেশ করে
Leave a Reply