কণার গতিতত্ত্ব : রবার্ট ব্রাউন (১৭৭৩ – ১৮৫৮) স্কটিশ রসায়নবিদ। সকল পদার্থই ক্ষুদ্রতম কণিকা দ্বারা গঠিত এবং তা কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় এই তিন অবস্থার যেকোনো একটি অবস্থায় থাকে। সকল অবস্থায় পদার্থের কণাসমূহ গতিশীল থাকে। এটি কণার গতিতত্ত্ব নামে পরিচিত। এ মতবাদের জন্য রবার্ট ব্রাউন স্মরণীয় হয়ে আছেন।
জেনে রাখ :
যার ভর আছে, জায়গা দখল করে এবং জড়তা আছে তাই পদার্থ।
পদার্থ সাধারণত তিন অবস্থায় থাকে-কঠিন, তরল এবং বায়বীয়।
পদার্থের আকৃতি, আয়তন, সংকোচনশীলতা, ঘনত্ব, সহজপ্রবাহ, প্রসারণশীলতা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য আছে।
জেনে রাখ :
কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় সকল অবস্থাতেই পদার্থের কণাসমূহ গতিশীল থাকে। একে গতিতত্ত্ব বলে।
কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন ও আকার আছে। তরলের নির্দিষ্ট আয়তন থাকে কিন্তু আকার থাকে না। বায়বীয় পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন বা আকার নেই।
কঠিন পদার্থের কণাগুলোর আকর্ষণ বল সবচেয়ে বেশি। এরপর তরল পদার্থের এবং সবশেষে গ্যাসীয় পদার্থের।
কঠিন পদার্থের আন্তঃআণবিক আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি থাকে। তরল পদার্থের কঠিনের চেয়ে কম এবং গ্যাসীয় পদার্থের একেবারেই কম থাকে।
কঠিন অবস্থায় পদার্থের কণাসমূহের গতিশীলতা সবচেয়ে কম হয়, তরল অবস্থায় গতিশীলতা কঠিনের চেয়ে বাড়ে। গ্যাসীয় অবস্থায় গতিশীলতা সবচেয়ে বেশি থাকে।
কঠিন পদার্থের ঘনত্ব আন্তঃআণবিক শক্তির কারণে সবচেয়ে বেশি হয়। তরল পদার্থের কঠিনের চেয়ে কম এবং বায়বীয় পদার্থের সবচেয়ে কম হয়।
কঠিন পদার্থে চাপ দিলে এর আয়তন সংকোচনশীলতা থাকে না বললেই চলে। তরল অবস্থায় স্বল্প মাত্রায় সংকোচনশীল হয় আর বায়বীয় পদার্থে আয়তন সংকোচনশীলতা সবচেয়ে বেশি হয়।
জেনে রাখ :
বায়ু ও অ্যামোনিয়া গ্যাসের মিশ্রণ ক্ষারীয় বলে তাতে লাল লিটমাস পেপার প্রবেশ করালে নীল রঙ ধারণ করে।
পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের স্ফটিক পানিতে যোগ করলে তা বেগুনি রঙ ধারণ করে।
ব্যাপন একটি স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া। তাপে ব্যাপন দ্রুত সাড়া দেয়।
গ্যাসীয় পদার্থ ব্যাপনে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় বস্তুর স্বতঃস্ফূর্ত ও সমভাবে পরিব্যাপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে।
বস্তুর ভর ও ঘনত্ব যত বেশি হয় ব্যাপন তত হ্রাস পায়।
জেনে রাখ :
সরু ছিদ্র পথে কোনো গ্যাসের অণুসমূহের উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়াকে নিঃসরণ বলে।
একটি গ্যাস বা বায়ু ভরা বেলুনে ছিদ্র করলে এতে থাকা অণুসমূহ ছিদ্রপথে বেরিয়ে পড়ে যতক্ষণ না চাপমুক্ত হয়।
যখন ছিদ্রস্থলে বেলুনের ভেতরের চাপ এবং বাইরের চাপ সমান হয় তখন নিঃসরণ ব্যাপনে রপান্তরিত হয়।
ব্যাপন ও নিঃসরণ বস্তুর ভর এবং ঘনত্বের ওপর নির্ভরশীল। বস্তুর ভর এবং ঘনত্ব যত বেশি হবে ব্যাপন ও নিঃসরণের হার তত হ্রাস পাবে।
জেনে রাখ :
মোম যখন জ্বলতে থাকে তখন পদার্থের তিনটি অবস্থাই একসাথেদেখা যায়।
মোম গলতে শুরু করলে এর মধ্যের সুতাটি তা শোষণ করে নেয়।
সুতার অগ্রভাগের মোম গ্যাসীয় অবস্থা প্রাপ্ত হয়।
মোম একটি হাইড্রোকার্বন অর্থাৎ জৈব যৌগ।
বাতাসের উপস্থিতিতে মোমের দহনের ফলে ঈঙ২, ঐ২ঙ, তাপ ও আলো উৎপন্ন হয়
জেনে রাখ:
কোনো কঠিন পদার্থের তরলে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে গলন বলে। গলন চলাকালীন অবস্থায় পদার্থের তাপমাত্রা স্থির থাকে।
কোনো তরল পদার্থের বাষ্পে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে স্ফুটন বলে। স্ফুটন চলাকালীন অবস্থায় পদার্থের তাপমাত্রা স্থির থাকে।
পদার্থের গলন ও স্ফুটন নির্দিষ্ট চাপে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ঘটে থাকে।
স্বাভাবিক চাপে (১ ধঃস) যে তাপমাত্রায় কোনো কঠিন পদার্থ তরলে পরিণত হয় সেই তাপমাত্রাকে সেই পদার্থের গলনাংক বলে।
জেনে রাখ :
কোনো কঠিন পদার্থকে সরাসরি বাষ্পে এবং বাষ্পকে সরাসরি তরলে রূপান্তরকরণকে ঊর্ধ্বপাতন বলে।
ঊর্ধ্বপাতন পদ্ধতিতে উদ্বায়ী পদার্থকে অনুদ্বায়ী পদার্থ থেকে পৃথক করা যায়।
ঊর্ধ্বপাতন : কঠিন পদার্থ বাষ্প
ন্যাপথালিন, আয়োডিন, কর্পূর, কঠিন ঈঙ২ ইত্যাদি পদার্থের ঊর্ধ্বপাতন হয়।
পদার্থ : যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য, যার ভর আছে, জায়গা দখল করে এবং যার জড়তা আছে, তাকে পদার্থ বলে। টেবিল, চেয়ার, মাটি, পানি, বাতাস ইত্যাদি পদার্থের উদাহরণ।
পদার্থের অবস্থাভেদ :
প্রকৃতিতে পদার্থ তিন অবস্থায় থাকতে পারে। যথা :
১. কঠিন,
২. তরল ও
৩. গ্যাসীয়।
*সাধারণ তাপমাত্রায় তামা, লোহা, কাঠ প্রভৃতি কঠিন পদার্থ;
*পারদ, পানি, দুধ প্রভৃতি তরল পদার্থ এবং
*অক্সিজেন, নাইট্রোজেন প্রভৃতি হলো গ্যাসীয় বা বায়বীয় পদার্থ।
আবার অবস্থা বিশেষে নির্দিষ্ট কোনো পদার্থ কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায় থাকতে পারে। যেমন : বরফ, পানি ও জলীয়বাষ্প হলো যথাক্রমে পানির কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থা।
কঠিন পদার্থ : সাধারণ অবস্থায় যেসব পদার্থের নির্দিষ্ট আকার এবং আয়তন থাকে, তাদের কঠিন পদার্থ বলে। যেমন : পাথর, লবণ, লোহা, বরফ ইত্যাদি।
কঠিন পদার্থের বৈশিষ্ট্য :
১. নির্দিষ্ট তাপ ও চাপে কঠিন পদার্থের আকার ও আয়তন সর্বদা নির্দিষ্ট থাকে।
২. তাপ প্রয়োগে সাধারণত কঠিন পদার্থ তরলে পরিণত হয়। যেমন : বরফকে উত্তপ্ত করলে তা গলে পানিতে পরিণত হয়।
ব্যতিক্রম : ন্যাপথালিন, আয়োডিন, কর্পূর, নিশাদল প্রভৃতি কঠিন পদার্থ তাপের প্রভাবে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয় এবং শীতল করলে বাষ্প থেকে কঠিন অবস্থায় ফিরে আসে। একে ঊর্ধ্বপাতন বলে।
৩. প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগেও কঠিন পদার্থের আয়তনের বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয় না।
৪. কঠিন পদার্থের দৃঢ়তা থাকে। বাইরের থেকে বল প্রয়োগ না করলে কঠিন পদার্থের আকার ও আয়তনের বিকৃতি ঘটানো যায় না।
তরল পদার্থ : সাধারণ অবস্থায় যেসব পদার্থের আয়তন নির্দিষ্ট কিন্তু আকার নির্দিষ্ট নয়, তাদের তরল পদার্থ বলে। যেমন : পানি, তেল, দুধ প্রভৃতি তরল পদার্থ।
তরল পদার্থের বৈশিষ্ট্য :
১. নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও চাপে তরল পদার্থের আয়তন নির্দিষ্ট থাকে কিন্তু নির্দিষ্ট আকার থাকে না। যখন যে পাত্রে রাখা হয়, তখন সেই পাত্রের আকার ধারণ করে।
২. তাপমাত্রা বাড়ালে তরলের আয়তন বাড়ে। তরলের তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়াতে থাকলে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পৌঁছে তরল বাষ্পে পরিণত হতে শুরু করে।
৩. তরলের তাপমাত্রা ক্রমশ কমালে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এসে তরল কঠিনে পরিণত হয়।
৪. তরলের অণুসমূহ স্থান পরিবর্তন করতে পারে। এজন্য তরল পদার্থের কোনো নির্দিষ্ট আকার থাকে না।
গ্যাসীয় পদার্থ : সাধারণ অবস্থায় যে পদার্থের নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন থাকে না, তাকে গ্যাসীয় পদার্থ বলে। যেমন : বায়ু, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, জলীয় বাষ্প প্রভৃতি গ্যাসীয় পদার্থ।
গ্যাসীয় পদার্থের বৈশিষ্ট্য :
১. গ্যাসীয় পদার্থের কোনো নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন নেই। গ্যাস বর্ণহীন বলে তা দেখা যায় না।
২. গ্যাসীয় পদার্থের পরিমাণ যত কমই হোক না কেন, তা যে পাত্রে রাখা হবে সে পাত্রের পুরো স্থান দখল করে থাকে।
৩. গ্যাসীয় পদার্থের অণুসমূহের মধ্যে দূরত্ব অনেক বেশি, তাই আকর্ষণ শক্তি অনেক কম, ফলে তারা প্রায় মুক্তভাবে চলাচল করে।
৪. একই তাপমাত্রা ও চাপে সমআয়তন সব গ্যাসে সমান সংখ্যক অণু থাকে।
পদার্থের রূপান্তর বা অবস্থার পরিবর্তন : অবস্থাবিশেষে নির্দিষ্ট কোনো পদার্থ কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায় থাকতে পারে। যেমন : বরফ, পানি ও জলীয় বাষ্প একই পদার্থ। তাপ বাড়িয়ে বা কমিয়ে এদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো যায়। সাধারণ তাপমাত্রায় পানি একটি তরল পদার্থ। পানিকে ঠাণ্ডা করলে 0 C তাপমাত্রায় তা বরফে পরিণত হয়। এই বরফে তাপ দিলে তা আবার পানিতে পরিণত হয়। পুনরায় ১০০ C তাপমাত্রায় পানি জলীয়বাষ্পে রূপান্তরিত হয়। জলীয় বাষ্পকে ঠাণ্ডা করলে তা পুনরায় পানিতে পরিণত হয়। এভাবে তাপের পরিবর্তন করে পদার্থকে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তর বা পরিবর্তন করা যায়।
Leave a Reply